চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চট্টগ্রাম এর অধীন মামলা নিষ্পত্তিতে নারী বিচারকগণ এগিয়ে।
জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীকে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা এবং বিশেষ কাজে আনন্দময় বিচারকাজে পরিবেশ সৃষ্টিতে অনন্য ভূমিকা রাখছেন চট্টগ্রামের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমি।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রত্যেকটা বিচারক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে মাস শেষে প্রণোদনা হিসেবে কাজের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করেন তিনি নিজে। টাকার অংকে এ পুরস্কার অনেকক্ষেত্রে নগণ্য হলেও এ পুরস্কার প্রদান করেন উনার নিজস্ব তহবিল থেকে।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধীন সি আর কোট , পুলিশ কোর্ট , জুডিসিয়াল সেকশন, নকল খানা, মালখানার প্রত্যেকটা কাজের তদারকি করছেন তিনি একা।
উনার অধীন রয়েছে উনার নিজস্ব চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একটি, অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুটি, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গত জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচটি ছিল বর্তমানে একটি বৃদ্ধি পেয়ে ছয়টি হয়েছে।
স্বন্দীপ চৌকি আদালত, বাঁশখালী চৌকি আদালত, পটিয়া চৌকি আদালত, বন আদালত, চট্টগ্রাম, নন-জিআর মোটরযান ও জি ডি মামলা, জি. আর( মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ) জি. আর (নারী শিশু নির্যাতন দমন), পারিবারিক সহিংসতা, বিশুদ্ধ খাদ্য সংক্রান্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটগণ, বিদ্যুৎ আদালত চট্টগ্রাম (উত্তর) ও বিদ্যুৎ আদালত চট্টগ্রাম (দক্ষিণ)।
জানুয়ারি মাসের শুরুতে এই আদালতের অধীন মামলা ছিল ২৩ হাজারেরও অধিক। জানুয়ারি মাসে নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে প্রায় ১৫০০, বদলি এবং অন্যান্য ভাবে প্রাপ্ত হয়েছে প্রায় ৯০০ টি মামলা, তারমধ্যে দুতরফা সূত্রে নিষ্পত্তি হয়েছে ৪০০টির অধিক মামলা এবং অন্যভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে ৭০০ অধিক মামলা বদলি হয়েছে প্রায় ১৩০০ টি মামলা।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমী একশত পঞ্চাশটি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট বেগম জিহান সানজিদা ১৪৫ টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত -৩ এর বিচারক জনাব শাহরিয়ার ইকবাল নিষ্পত্তি করেছেন ১০৬ টি মামলা, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জনাব আবদুল্লাহ খান নিষ্পত্তি করেছেন ১০৮ টি মামলা।
ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে এই আদালতের অধীন মামলা ছিল ২২ হাজারেরও অধিক। ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে প্রায় ১৪১৯, বদলি এবং অন্যান্য ভাবে প্রাপ্ত হয়েছে প্রায় ৭৬২ টি মামলা, তারমধ্যে দুতরফা সূত্রে নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৯২টির মামলা এবং অন্যভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৬৬ টি মামলা, বদলি হয়েছে প্রায় ১১১৫টি মামলা।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমী ১৩৪টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোসাম্মৎ ফরিদা ইয়াসমিন নিষ্পত্তি করেছেন ১১৫ টি মামলা, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত -১ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট বেগম জিহান সানজিদা ১৪৭ টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বন আদালত) এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারজানা ইয়াসমিন সর্বোচ্চ ১৭৬ টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জনাব আবদুল্লাহ খান নিষ্পত্তি করেছেন ১০২ টি মামলা।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাবা কামরুন নাহার রুমী বলেন শুধু জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি মাসে নয় বিগত ২০২০/২০২১ সালের করোনা মহামারী থেকে সারাদেশে যখন মামলাজট বাড়তে থাকে তখন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চট্টগ্রামে এই মামলার জট কমতে থাকে। সারাদেশে সিজেএম চট্টগ্রাম ম্যাজিস্ট্রেটসীতে সবচেয়ে বেশি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।
বর্তমান সিজেএম দায়িত্ব গ্রহণের পর নকল খানার দিকে তিনি সবার আগে নজর দেন। আইনানুগ সময়ের মধ্যে তিনি নকল সরবরাহের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক পাঠাগার সম্পাদক এডভোকেট মোঃ নজরুল ইসলাম এর সাথে কথা বললে তিনি জানান বর্তমানে সিজেএম আদালতের নকল খানায় নকল পেতে কোন বেগ পেতে হয়না। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সই মোহর যুক্ত নকল পাওয়া যায়। তবে তিনি বলেন অন্যান্য আদালতে থানার মামলায় অর্থাৎ জি আর মামলা যেদিন পুটাপ দেয়, সে দিন শুনানি করা হয়, কিন্তু সিজেএম আদালতে মামলা শুনানি করার জন্য একদিন আগে পুটাপের দরখাস্ত দিতে হয় এবং পরদিন শুনানি জন্য প্রস্তুত করা হয়। যদি দিনের পুটাপ দিনে শুনানি করা হয় সে ক্ষেত্রে আইনজীবিদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে এবং বিচারপ্রার্থী জনগণ আরো বেশি উপকৃত হবে।
বর্তমান সিজেএম দায়িত্ব গ্রহণের পর মামলায় আটক কৃত চোরাই মাল, জব্দকৃত মালামাল ও অন্যান্য মালামাল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাজেয়াপ্ত এবং ধ্বংস করা হয়, যা অন্যান্য আদালতে বছরের পর বছর পড়ে থাকে অনেক সময় আলামত নষ্ট হয়ে যায়। এ বিষয় সমূহ আদালতের বিচারপ্রার্থী জনগণ ও আইনজীবীদের নজর কাড়ে।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার বেগম টাজের উপর ভিত্তি করে উনার আওতাধীন কর্মচারী, কর্মকর্তা ও বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটগণকে কাজে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রত্যেক মাসে নিজস্ব তহবিল থেকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করে থাকেন। যাহা বিচারব্যবস্থায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
দেশের মহামারী করোনাভাইরাস ও ওমিক্রন এর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের সম্মুখে ডিসপ্লে বোর্ড এর মাধ্যমে সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত করোনা ভাইরাস সচেতনতা মূলক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
এসব বিষয়ে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন্নাহার রুমীর সাথে সরাসরি কথা বললে তিনি জানান আমি আমার ম্যাজিস্ট্রেসিতে সবসময় স্বচ্ছ জবাবদিহিতা এবং গতিসম্পন্ন রাখতে এ সকল কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকি।
জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলফনামা শাখার অনিয়মের কথা তুলে ধরলে তিনি সাথে সাথে নাজির এবং বেঞ্চ সহকারীকে ডেকে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং হলফনামা সংক্রান্তি কার্যক্রমের পুনঃবিন্যাস করার আদেশ প্রদান করেন। তিনি বলেন আমি অনিয়ম দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স’ নীতিতে বিশ্বাস করি। অনিয়ম-দুর্নীতি যেখানে দেখবেন সে বিষয়টি আমাকে জানানোর জন্য আমি আমার ফোন নাম্বার আদালত ভবনের বিভিন্ন প্রান্তে লাগানোর ব্যবস্থা করেছি। এবং জিয়ার মামলায় পুটাপের বিষয়টা আমি দেখব এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটগণের সাথে আলাপ আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব।
© আইন আদালত প্রতিদিন
6,916 total views, 4 views today
Leave a Reply