নিজস্ব প্রতিবেদক;
নওগাঁয় পরিকল্পিতভাবে তানিয়া আক্তার মিমকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার পর পিতার করা মামলাটি আমলে নিয়ে এফ আই আর হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দিয়েছে বিজ্ঞ আদালত।
মামলায় এস এম নাজিম উদ্দীন বাবু(৫০) , মমেনা খাতুন (৪০) এবং রকি (২৮) সহ অজ্ঞাত ব্যক্তিগণকে আসামি করে দন্ডবিধির ৩০২/৩৪/২০১ ধারায় নালিশী দরখাস্ত দাখিল করেন মো:মিজানুর রহমান (৫০) বিজ্ঞ ০৪ নং আমলী আদালত ( পত্নীতলা ) এর বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব সাইফুল ইসলাম এ আদেশ দেন। ফরিয়াদী মিজানুর রহমান তার নালিশী দরখাস্তে উল্লেখ করেন যে , তার মেয়ে তানিয়া আক্তার মিম নওগাঁ পত্নীতলা থানাধীন নজিপুর পৌরসভাস্থ এস.এম নাজিম উদ্দিন বাবুর নজিপুর ইসলামীয়া জিডিটাল ডায়ানোস্টিক সেন্টারে গত ০১ বছর যাবত নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন । বাদীর মেয়ে ০১ নং আসামির উক্ত ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের একটি কক্ষে বসবাস করিত । গত ১৭/১১/২০২০ ইং উল্লিখিত ৩জন আসামি ও অজ্ঞাতনামা আসামিগন মিলে বাদীর মেয়েকে হত্যা করে তার গলায় ওড়না পেচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে । ০১ নং আসামি গত ১৮/১১/২০ ইং তারিখ সকাল ০৮:০০ ঘটিকায় বাদীকে ফোন করে বলে যে তার মেয়ে নাকি আত্মহত্যা করেছে । বাদী ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখতে পান তার মেয়ের গলায় ওড়না পেচানো লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে । তার মেয়ের পা রুমের মেঝেতে লেগে ছিল এবং তার পড়নে কোন কাপড় ছিল না । ঐদিনই তিনি পত্মীতলা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ বলে যে আপনার মেয়ের পোস্ট মর্টেম করতে আপনার স্বাক্ষর লাগবে এই বলে বাদীর স্বাক্ষর নেয় । পরে বাদী জানতে পারেন তার স্বাক্ষর নিয়ে পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা করেছেন যেখানে তার মেয়ের মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে দেখানো হয়েছে । পত্মীতলার থানার অপমৃত্যু মামলা নং ১৯/২০ , তারিখ: ১৮/১১/২০২০ ইং । বাদী আদালতকে জানান যে তিনি থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন নি বরং পুলিশ তার মেয়ের পোস্ট মর্টেমের কথা বলে বাদীর স্বাক্ষর নিয়েছেন । বাদী দাবি করেন তার মেয়েকে উল্লিখিত ০৩ জন আসামিসহ অজ্ঞাত আসামিগন হত্যা করে লাশ ফ্যানের সাথে ওড়না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে । বাদী ১৯/২০ নং অপমৃত্যু মামলার কপি সহ তার মেয়ের ঝুলন্ত অবস্থার কিছু স্থিরচিত্র আদালতে দাখিল করেছেন । স্থিরচিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে , ভিকটিমের লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে কিন্তু তার পা মেঝেতে ঠেকানো এবং ভিকটিমের পড়নে কোন জামা কাপড় ছিল না , তার শরীরের কিয়দাংশে শুধুমাত্র একটি তোয়ালে পেচানো ছিল । গলায় ওড়না পেচানো ছিল । সাধারণত ওড়না পেচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে কেউ আত্মহত্যা করলে তার গলার সামনের অংশে অর্থাৎ শ্বাসনালীতে আঘাত লাগার কথা নয় । ভিকটিমের স্থিরচিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে তার গলার সামনের অংশের শ্বাসনালীতে বড় পরিষ্কার ক্ষত চিহ্ন রয়েছে যেখানে ওড়নার চাপ লাগছিল না । তাছাড়া কেউ আত্মহত্যা করতে চাইলে তিনি উলঙ্গ হয়ে আত্মহত্যা করবেন তা বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অবিশ্বাস্য এবং বাস্তবসম্যত নয় । সার্বিক পর্যালোচনায় উক্ত ঘটনাটি একটি হত্যাকান্ড মর্মে বিজ্ঞ আদালতের নিকট প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত এত্র মামলাটি আমলে গ্রহণ করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৬(৩) ধারায় এজাহার হিসেবে পত্মীতলা থানায় প্রেরণ করেন এবং মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে অবিলম্বে থানায় মামলা রেকর্ডপূর্বক মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই, নওগাঁ বরাবর প্রেরণ করার জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), পত্নীতলাকে নির্দেশ প্রদান করেন ।
9,625 total views, 2 views today